।। পুষ্টি ।।
1. মৌল বিপাক বলতে কি বুঝায় ?
🔸️ একজন সুস্থ ব্যক্তির হালকা খাদ্য গ্রহণের 12-14 ঘন্টার পর, সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামরত এবং সজাগ অবস্থায় 25 ° C তাপমাত্রায়, 24 ঘন্টায় দেহের প্রয়োজনীয় শারীরবৃত্তীয় কাজগুলি ( যেমন : হৃৎস্পন্দন, শ্বসন, রক্ত - সংবহন ইত্যাদি ) নিয়ন্ত্রণের জন্য দেহ থেকে যে ন্যূনতম তাপ নির্গত হয় তাকে মৌল বিপাক বা বেসাল মেটাবলিজম বলে। একজন 25 বৎসর বয়স্ক ব্যক্তির দেহ থেকে 24 ঘন্টায় 1700K. Cal. তাপশক্তি নির্গত হয়।
2. চোষক মূলের অবস্থান ও কাজ লেখো।
🔸️ অবস্থান : পরজীবী উদ্ভিদ স্বর্ণলতায় চোষক মূল থাকে।
কাজ : চোষক মূলের সাহায্যে পরজীবী উদ্ভিদ স্বর্ণলতা পোষকের ফ্লোয়েম কলা থেকে খাদ্যরস শোষণ করে।
3. ম্যারাসমাস রোগের লক্ষণগুলি কি কি ?
🔸️ দেহ জীর্ণ - শীর্ণ, অস্থিচর্মসার হয়। পেশিক্ষয় ও চর্মের নীচের স্তরে ফ্যাট ক্ষয় হয়। প্রায়ই পেটের রোগ হয়, পেট ফাঁপা, বদহজম, পাতলা পায়খানা হয়, ফলে যা খায় তা দেহের কাজে লাগে না।
4. পেপসিন কি ? এর কাজ উল্লেখ করো।
🔸️ পেপসিন হল এক রকম প্রোটিন বিশ্লিষ্টকারী উৎসেচক ( প্রোটিওলাইটিক এনজাইম ) যা পাকস্থলীর পেপটিক গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। পেপসিন আম্লিক মাধ্যমে প্রোটিনকে পেপটোনে পরিণত করে।
5. ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ কাকে বলে ?
🔸️ যে বিশেষ দেহ সংরক্ষক খাদ্য - উপাদান সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে প্রাণী দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ - প্রতিরোধক শক্তি বাড়ায় এবং যার অভাবে নানারকম রোগলক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ বলে।
6. অ্যান্টি - ভিটামিন কাকে বলে ?
🔸️ যেসব রাসায়নিক পদার্থ ভিটামিনের কাজে বাধা দেয় বা উহাকে নষ্ট করে তাদের অ্যান্টি - ভিটামিন বলে।
যেমন : পাইরিথিয়ামিন ভিটামিন B1 বা থিয়ামিনের এবং গ্যালাক্টোফ্লাভিন ভিটামিন B2 বা রাইবোফ্লাভিনের অ্যান্টিভিটামিন।
7. স্বভোজী পুষ্টি কাকে বলে ?
🔸️ যে পুষ্টি প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল যুক্ত জীব নিজেদের দেহে খাদ্য সংশ্লেষ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে, তাকে স্বভোজী পুষ্টি বলে।
যেমন : সবুজ উদ্ভিদের পুষ্টি।
8. পরভোজী পুষ্টি কাকে বলে ?
🔸️ যে পুষ্টি পদ্ধতিতে জীব তার নিজের দেহে খাদ্য সংশ্লেষ না করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের তৈরি খাদ্য গ্রহণ করে অথবা মৃত জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে, তাকে পরভোজী পুষ্টি বলে।
যেমন : পরভোজী প্রাণীদের পুষ্টি এবং মৃতজীবী ও পরজীবী উদ্ভিদের পুষ্টি।
9. জুক্লোরেল্লা ও হাইড্রার মধ্যে কীভাবে কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে ?
🔸️ জুক্লোরেলা নামক শ্যাওলা হাইড্রার এন্ডোডার্মে বাস করে। শ্যাওলাটি খাদ্য সংশ্লেষের জন্য হাইড্রার কাছ থেকে CO2 গ্যাস গ্রহণ করে এবং বিনিময়ে হাইড্রাকে শর্করা জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করে। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে মিথোজীবীতার উদাহরণ।
10. পরিপাকে যকৃতের ভূমিকা কি ?
🔸️ যকৃৎ থেকে কোনও উৎসেচক নিঃসৃত হয় না। কিন্তু যকৃৎ নিঃসৃত পিত্তে যে পিত্তলবণ থাকে তা ফ্যাট - জাতীয় খাদ্যকে অবদ্রবে পরিণত করে পরিপাক ও শোষণের উপযোগী করে তোলে ( অগ্ন্যাশয় এবং আন্ত্রিক রসের লাইপেজ অবদ্রবীত ফ্যাটের ওপরই কাজ করতে পারে ) তাই, যকৃৎ থেকে পাচক উৎসেচক নিঃসৃত না হওয়া সত্ত্বেও ফ্যাট পরিপাকে এটি মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করায় যকৃৎকে পৌষ্টিক গ্রন্থি বলা চলে।
11. উদ্ভিদজ প্রোটিন অপেক্ষা প্রাণীজ প্রোটিন সহজপচ্য কেন ?
🔸️ যেসব প্রোটিনে অপরিহার্য অ্যাসিডগুলির সংখ্যা বেশি, তারা সহজে পাচিত হয়। প্রাণীজ প্রোটিনে উদ্ভিজ প্রোটিন অপেক্ষা অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের সংখ্যা বেশি তাই উদ্ভিজ্জ প্রোটিন অপেক্ষা প্রাণীজ প্রোটিন সহজপাচ্য।
12. দুধে উপস্থিত প্রোটিন ডালে উপস্থিত প্রোটিনের থেকে উৎকৃষ্ট কেন ?
🔸️ দুধে উপস্থিত প্রোটিন প্রথম শ্রেণির প্রোটিন হওয়ায় এই প্রোটিন সবকটি অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে কিন্তু ডালে উপস্থিত প্রোটিন দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন হওয়ায় অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড সংখ্যায় কম থাকে। তাই দুধে উপস্থিত প্রোটিন ডালে উপস্থিত প্রোটিনের থেকে উন্নতমানের হয়।
13. পতঙ্গভুক উদ্ভিদ কাকে বলে ?
🔸️ যেসব উদ্ভিদ পতঙ্গ ধরে তাদের দেহ থেকে নাইট্রোজেনঘটিত প্রোটিন শোষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে বা নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটায়, তাদের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বলে। যেমন : কলসপত্রী, পাতাঝাঝি ইত্যাদি উদ্ভিদ।
14. ম্যাক্রো বা মেজর এলিমেন্ট বা অতিমাত্রিক মৌলিক উপাদান কাকে বলে ?
🔸️ যেসব মৌলিক উপাদান উদ্ভিদের স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য অতি আবশ্যক এবং পুষ্টিতে বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয়, তাদের ম্যাক্রো বা মেজর এলিমেন্ট বলে।
যেমন : C, H, O, N, S, P, K, Mg, Ca এবং Fe।
15. আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে এমন একটি উদ্ভিদের নাম করো ? এরা কোথায় জন্মায় ?
🔸️ কলসপত্রী, সূর্যশিশির প্রভৃতি পতঙ্গভুক উদ্ভিদরা আমিষজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে। এ জাতীয় উদ্ভিদরা নাইট্রোজেনবিহীন মৃত্তিকায় ভালো জন্মায়। ভারতবর্ষের গারো ও খাসিয়া পাহাড়ে কলসপত্রী গাছ জন্মায়।
16. পকস্থলীতে কীভাবে খাদ্যবস্তু পাকমণ্ডে পরিণত হয় ?
🔸️ মুখবিবরে চর্বিত খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছালে ঐ চর্বিত খাদ্যের সঙ্গে পাকরস মিশ্রিত হয়। পাকরসে HCI থাকায় ঐ চর্বিত খাদ্য পাকরসের উৎসেচকের দ্বারা আংশিক বিশ্লিষ্ট হয়ে পাকমণ্ড বা অ্যাসিড কাইমে পরিণত হয়।
17. উদ্ভিদ পুষ্টিতে জল কীভাবে সাহায্য করে ?
🔸️ উদ্ভিদের পুষ্টিতে জলের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। খাদ্য সংশ্লেষের জন্য জল হল প্রধান কাঁচামাল। খনিজ লবণ পুষ্টির জন্য উদ্ভিদ মূল দিয়ে জলে দ্রবীভূত অবস্থায় খনিজলবণ শোষণ করে। উদ্ভিদের সংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন খাদ্য সারা দেহে জলে দ্রবীভূত অবস্থায় পরিবাহিত হয়। সুতরাং উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুতি , খাদ্য পরিবহন এসবই জলের সাহায্যেই ঘটে। অর্থাৎ, উদ্ভিদ কোশে বিপাকীয় কাজগুলি পরিচালনার জন্য জলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
18. মানুষ সেলুলোজ পরিপাক করতে পারে না কিন্তু গরু ছাগল সেলুলোজ পরিপাক করে কীভাবে ?
🔸️ গরু, ছাগল শাকাহারী প্রাণী। এদের পাকস্থলীর রুমেনে অবস্থিত অনুজীব ট্রাইকোডারমা কোনিগি সেলুলেজ উৎসেচক ক্ষরণ করে যা সেলুলোজ ( ঘাস, শাকসব্জী ) পরিপাকে সাহায্য করে। অপরপক্ষে মানুষের পরিপাকনালীতে সেলুলেজ উৎসেচক না থাকায় সেলুলোজ পরিপাক করতে পারে না।
19. পরজীবী প্রাণী ও পরভোজী প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
🔸️ পরজীবী প্রাণী ও পরভোজী প্রাণীর পার্থক্য হল :
পরজীবী প্রাণী | পরভোজী প্রাণী |
---|---|
(১) এরা পোষক প্রাণীর দেহ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে। | (১) এরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের তৈরি খাদ্য গ্রহণ করে। |
(২) এরা সব সময় পোষকের ক্ষতিসাধন করে নিজেরা উপকৃত হয়। | (২) এরা উদ্ভিদের সরাসরি ক্ষতিসাধন করে না। |
(৩) কৃমি, উকুন ইত্যাদি। | (৩) ব্যাঙ, মানুষ, হরিণ ইত্যাদি। |
20. ভিটামিন ও এনজাইমের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
🔸️ ভিটামিন ও এনজাইমের পার্থক্য হল :
ভিটামিন | এনজাইম |
---|---|
(১) ভিটামিন বিভিন্ন জৈব অণু দিয়ে গঠিত; এরা প্রোটিনধর্মী নয়। | (১) এনজাইম মূলত প্রোটিন দিয়ে গঠিত; অর্থাৎ এরা প্রোটিনধর্মী। |
(২) ভিটামিন সহ-অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। | (২) এনজাইম জৈব-অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। |
(৩) ভিটামিন সাধারণত প্রাণীদেহে সংশ্লেষিত হয় না ( ব্যতিক্রম : A, D, B12 )। | (৩) উৎসেচক প্রাণীদেহে সংশ্লেষিত হয়। |